দুর্ভাগ্য বশত 133 দিন সমুদ্রের মধ্যে একা থাকার পরে কি ঘটেছিল লোকটির











বন্ধুরা সমুদ্র এমন একটা জায়গায় যে অনেক মানুষের জীবন এই সমুদ্র থেকেই   চলে আবার এই সমুদ্রই না জানি কত লোকের জীবন ধ্বংসের কারন হয়ে যায়,
কিন্তু আমি একটি কথা অবশ্যই বলতে পারি যে সমুদ্র কারো প্রতি দয়া দেখায় না
সাথে সাথে আমাদের এটাও ভোলা যাবে না যে,  প্রকৃতির কাছে আমরা অনেক ছোট এক টুকরো মাত্র।  আর কখনও সমুদ্রের শক্তির কাছে নিজের শক্তির বরাই করার সাহস ভুলেও করা উচিত নয়। যদি কেউ সমুদ্রে ফেঁসে যায় তাহলে শুধুমাত্র কিসমতই তাকে বাঁচাতে পারে।  কিন্তু আজ যে সত্য ঘটনা আমি আপনাদের বলতে চাইছি,  এটা শুনে কেউ এটার উপরে বিশ্বাস করতে পারেনি।
এই লোকের জন্য জাহাজে করা একটি সমুদ্র সফর পুরুপুরি ভাবে একটি ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, দুর্ঘটনার কারনে খোলা সমুদ্রে ছোট্ট একটি ভেলার উপরে পুরো 133 দিন কাটিয়েছেন, অবশেষে জীবনতো তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। চায়না নাগরিক পুন লিম ব্রিটিশ বণিক জাহাজে দ্বিতীয় স্ট্যুয়ার্ড হিসেবে কাজ করছিলেন
তার জাহাজটি কেপ টাউন থেকে প্যারামাইবো, সুরিনাম এবং নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেন এতে 
কোন সন্দেহ ছিল না যে তার জাহাজ ওই সময় সবচাইতে বেশী আধুনিক প্রজুক্তির ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কেপটাউন থেকে শুধু একটাই জাহাজ নিয়ে যাত্রা করেন।  সময় একলা ১টি জাহাজ সমুদ্রে ঘোরাফেরা করলে যে কারো জন্য শিকার করা খুবই সহজ হত।  যাত্রা করার এক সপ্তাহ পর পুন লিমের জাহাজে পানির নিচ থেকে জার্মানি দুটি গোলা পর পর এসে আঘাত করে,  যা কয়েক মিনিটের মধ্যে জাহাজটিকে কয়েক টুকরা করে এবং জাহাজটি পানিতে ডুবতে শুরু করে।
ওই সময় জাহাজে ৫৩ জন যাত্রী ছিল বদকিসমতের কারনে 52 জন যাত্রী দুর্ঘটনায় মারা যায়। 
শুধুমাত্র পুন লিম একেলাই বেঁচে যান।  53 জন যাত্রীর মধ্যে শুধুমাত্র পুন লিমই ছিল যে লাইফ জ্যাকেট পরে  শুধু চেক করতে ছিল এটাকে কিভাবে পড়া যায়। আর সময় জাহাজে হামলা হয়ে যায়। তখনই জাহাজের বয়লার ফেটে যায় যাতে একটি বড় ঢেউ তৈরি হয় এবং পুন লিমকে অনেক দূরে নিয়ে ফেলে দেয়। ভাগ্যক্রমে 2 ঘন্টা  পর সমুদ্রে একটা ভাসমান কাঠের ভেলা নজরে পড়ে। ভেলাতে খারাপ কিছু খাবার এবং পানযোগ্য কিছু পানি ছিল,  কিন্তু অতি অল্প সময়েই সব খানাপিনা গুলো শেষ হয়ে যায়। আর ভেলা থেকে একটা চিকন লোহা বের করে নেন আর এটা থেকে তিনি মাছ ধরার জন্য একটি হুক তৈরি করেন। আর সে ভেলাতে মজুদ থাকা একটা পাতলা পাত্রের টুকরো থেকে চাকু তৈরি করে নেয়। 
নিজের লাইফ জ্যাকেট এর সাহায্যে বৃষ্টির পানি একত্রিত করেন।  কিন্তু একটি অনেক বড় সমস্যা সামনে আসে, বেচারা পুন লিম সমুদ্রে একলা তো  ছিলেনই তিনি সাঁতারটাও 
জানতেন না, এজন্য ভেলা থেকে একটা রশ্মি বের করে ভেলার সাথে নিজেকে বেঁধে রাখেন।  
কারন যদি ভুল করেও সে পানিতে পড়ে যায় তাহলে যেন কমছেকম ভেলাতে উঠে আসতে পারে। 
সপ্তাহ চলে যায় উনি নিজের জন্য খানা এবং বৃষ্টির পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে একত্রিত করে নেন। কিন্তু কিসমতে অন্য কিছুই লেখা ছিল। একটি ভয়ঙ্কর তুফান আসে, যার কারণে ভেলাতে মজুদ করা খাদ্য খাবার পানির বেশির ভাগই সমুদ্রে মিশে যায়। তুফান আসার পরে নিজেই তার বাঁচার ইচ্ছা ছেড়ে দেন। এরপর তিনি তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পাখিদের শেয়ার করা শুরু করেন, হাঁ আপনি সঠিক শুনেছেন
উনি পাখিদের মেরে তাদের রক্ত পান করতে শুরু করেন।  তার জন্য এই আইডিয়াটা অনেক সফল হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত একদিন দুপুরে তার চারপাশে শার্ক মাছ কে  ঘুরতে দেখেন, 
কিন্তু একটা চমৎকার ব্যাপার ছিল যে সার্ক দেখে পুন লীম ভয় পায় নাই বরং ওটাকে ধরার জন্য প্ল্যান তৈরি করেন। এখন হয়ত আপনি 
চিন্তা করতে পারেন যে একজন ব্যক্তি কি করে শার্ক ধরার চেষ্টা করতে পারে,  কিন্তু পুনের প্লান কোন বড় সার্ক ধরার  জন্য ছিল না। বরং একটা ছোট সার্ক ধরার জন্য ছিল।  পুন লিম মরা কিছু পাখি তার ভেলার চারপাশে লটকে ঝুলে রাখেন এবং ভাগ্যক্রমে তিনি ছোট সার্ক ধরে ফেলেন,  তারপরে সার্ক ধরে তার সমস্ত রক্ত পান করে তার তৃষ্ণা মেটান,  আর কয়েকদিন কাঁচা মাছ খেতে থাকেন।  পুন লিমের সামনে দিয়ে  অনেক বড় এবং ছোট জাহাজ চলে যায় যাদের কাছ থেকে কোন সাহায্য চেয়ে পায়নাই।
কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এটি যে সমদ্রে ট্যুরের সময় এই কৌশল একটি ফাঁদ হিসাবে মানুষ ব্যাবহার করতেন। কিছু গোয়েন্দা খোলা সমুদ্রে এরকম করে অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তাদের জাহাজে উঠে তাদের দেশে ঢুকে পড়তেন। 
যার কারণে অনেক জাহাজ পুনকে চোখে দেখেও তারা গুরুত্ব না দিয়ে চলে যায়, 
 অবশেষে 1943 সালের 5 এপ্রিল ব্রাজিলের উপকূলে  তিনজন ব্রাজিলিয়ান জেলে পুন লিমকে দেখতে পান এবং উদ্ধার করেন। পুন লিম 133 দিন খোলা সমুদ্রে একেলা কাটান এখন একটু চিন্তা করে দেখুন যে 133 দিনে তার সাথে কি কি ঘটতে পারত।  যখন পুনকে বাঁচানো হয় তখন তার ওজন 13 কেজি কমে গিয়েছিল।  তাকে 4 সপ্তাহ পর্যন্ত হসপিটালে রাখা হয়। 
একটা ভালো কাজ হল যে অবশেষে তাকে সঠিক সময়ে জীবন্ত উদ্ধার করতে পেরেছিলেন।  আর জাহাজের  53 যাত্রীর মধ্যে শুধুমাত্র পুন লিমই একেলা বেঁচে ফিরে। 
১৩৩ দিন কোন অল্প সময় নয়।  আপনি একটু  ভেবে দেখুন আপনি একদিন হয়ত বাঁচতে পারবেন না তাও  বিনা খাবার পানিতে,  যে সময় পুন লিমকে বাঁচানো হয় সময় এতদিন পর্যন্ত খোলা সমুদ্রে কেউ থাকেনাই। এটা সময় একটা রেকর্ড তৈরি হয়।  এর পরে পুন নিজে বলেন যে কারো ভাগ্য যেন এমন না হয়,  যাকে আমার রেকর্ড ভাঙতে হয়।  কিন্তু তারপরেও এমন অনেক রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
দোস্ত এই সত্য ঘটনা থেকে আপনি কি শিখলেন নিচে কমেন্ট করে আমাকে অবশ্যই জানাবেন।   ধন্যবাদ

Comments

Popular posts from this blog

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ৫ জাহাজ যার ভেতরে দেখলে বিস্মিত হবেন - Top 5 Biggest...

পৃথিবীর বিস্ময়কর ৫ টি জলপ্রপাত। The top 5 Wonders waterfalls of the World Iguazu, Gullfoss, Niagara